মো. আরফাত ছিদ্দিকী
গ্রুপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইছামতি গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ
বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক বিশেষ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা, ডলার সংকট, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে এই কঠিন বাস্তবতার মাঝেও রয়েছে অগণিত সম্ভাবনা—যা আমাদের নতুন করে পথ খুঁজে নিতে অনুপ্রাণিত করছে।
বৈশ্বিক চাপ ও দেশের বাস্তবতা
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা বাংলাদেশের আমদানি নির্ভর অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসা ও ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। কিন্তু এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য নতুনভাবে চিন্তা করার সুযোগও তৈরি করেছে—আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভর উৎপাদনে জোর দেওয়ার।
উদ্যোক্তা ও উৎপাদন খাতের সুযোগ
আমাদের কৃষি, খাদ্যপ্রক্রিয়াজাত, গার্মেন্টস, তথ্যপ্রযুক্তি ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। দেশীয় উদ্যোক্তারা যদি আধুনিক প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং দক্ষ মানবসম্পদে বিনিয়োগ করেন, তবে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব। “আমদানি নয়, উৎপাদনই উন্নয়নের চাবিকাঠি” — এই নীতিকে বাস্তবে রূপ দিতে পারলেই দেশের অর্থনৈতিক ভিত আরও মজবুত হবে।
তরুণ প্রজন্ম ও গ্রামীণ অর্থনীতি
তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে মূলধারায় আনা এখন সময়ের দাবি। স্থানীয় কাঁচামাল, কৃষিপণ্য ও শ্রমশক্তিকে ব্যবহার করে নতুন শিল্প গড়ে তোলা গেলে শহর ও গ্রামের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য তৈরি হবে।
🔹 দূরদর্শী পরিকল্পনা ও ঐক্যের প্রয়োজন
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রয়োজন কেবল সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং সমন্বিত পরিকল্পনা। সরকার, উদ্যোক্তা, শ্রমিক ও সাধারণ জনগণের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই আমরা অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি।
শেষ কথা
অর্থনীতি কেবল সংখ্যার হিসাব নয়; এটি মানুষের বিশ্বাস, পরিশ্রম ও ইতিবাচক মানসিকতার প্রতিফলন। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই, সাহস নিয়ে এগিয়ে যাই, তবে প্রতিকূল সময়ই হয়ে উঠবে নতুন সম্ভাবনার সূচনা। বাংলাদেশের অর্থনীতি আবারও ঘুরে দাঁড়াবে—আরও শক্তভাবে, আরও আশাবাদীভাবে।
প্রকাশনা: অর্থনীতি বার্তা
লেখক: মো. আরফাত ছিদ্দিকী
গ্রুপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইছামতি গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ
